December 7, 2024, 7:58 am
ইয়াসিন আলী সরদার :
আজ মহান মে দিবস । বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন। আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস, অথবা মে ডে, বিশ্বব্যাপী একটি প্রতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের উৎসব যা প্রতিবছর ১লা মে পালন করা হয়। এই দিনটি শ্রমিকদের যৌথ প্রতিবাদের চেয়ে উত্তম শ্রম দাবির জন্য গঠিত হয়েছিল।
সে সময় কারখানায় কোন নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা বা বিশ্রাম ছাড়াই টানা দিনে ১৫-১৬ ঘণ্টা কাজ করতে হতো এক একজন শ্রমিককে।কিন্তু বিনিময়ে পারিশ্রমিক ছিল খুবই সল্প, যা তাদের জীবনধারণে পর্যাপ্ত ছিল না।
১৮৮৪ সালে আমেরিকার শিকাগোয় একটি ব্যবসায়ী ব্যক্তির নামের হোয়াইট হউয়ায় লেবর ইউনিয়ন কর্মীরা কাজের সময় অসুস্থ হলে একদল শ্রমিক মালিকপক্ষকে দৈনিক ৮ ঘণ্টা কর্মসময় নির্ধারণের দাবি জানান। এ দাবি পূরণের সময় হিসেবে ১৮৮৬ সালের ১ মে’কে নির্ধারণ করেন শ্রমিকরা। কিন্তু কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের এ দাবি কর্ণপাত করেননি।
এ নিয়ে ধীরে ধীরে ক্ষোভ সৃষ্টি হতে থাকে তাঁদের মনে। সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ এই আন্দোলন। আর শিকাগো ছিল যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পকারখানা ও ইউনিয়ন সংগঠনগুলোর কেন্দ্র।
পরবর্তী কয়েক দিনে এই আন্দোলনকে ব্যবসায়ী ও রাজনীতি মহল পছন্দ না করলেও, আরও হাজার হাজার ক্ষুব্ধ শ্রমিক ও আন্দোলনকারী এতে যুক্ত হতে থাকেন। পহেলা মে শিকাগোতে, যেখানে প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক সমবেত হন।
পরবর্তীতে ১৮৮৬ সালের ৪ মে শিকাগোর হে মার্কেটে শ্রমিকদের বিক্ষোভের সময় হঠাৎ পুলিশের ওপর বোমা হামলায় নিহন হন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। তাৎক্ষণিক এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে পুলিশ। নিহত হন প্রায় ১০-১২ জন শ্রমিক। আহত হয়েছিলেন বহু।
কিন্তু শ্রমিকদের এই আত্মত্যাগ বিফলে যায়নি। শিকাগো শহরের রক্তাক্ত ইতিহাস সারা বিশ্বে শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
এ ঘটনার দুই বছর পর ১৮৮৯ সালে প্যারিসে ফরাসি বিপ্লবের ১০০ বছর পূর্তিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের প্রথম কংগ্রেসে শিকাগো শ্রমিক আন্দোলনের দিনটিকে ১৮৯০ সাল থেকে পালনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। ১৮৯১ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় কংগ্রেসে প্রস্তাবটি আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়।
সেই থেকে শ্রমিকদের কাজের সময়সীমা দিনে আট ঘণ্টা করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি, এই দিনটিকে শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই দিনে ছুটির কথাও বলা হয়। সেই থেকে আজও মে মাসের প্রথম দিনটিকে (মে ডে) শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
ওইদিন তাদের আত্মদানের মধ্য দিয়ে শ্রমিক শ্রেণির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
এই আন্দোলনের ফলে মার্কিন প্রযুক্তিবাদী সরকার ১৯৩৮ সালে আমেরিকায় মে দিবস হিসেবে অফিসিয়ালি স্বীকৃতি দেন। পরে বিভিন্ন দেশে এই দিনটি শ্রমিকদের অধিকারের জন্য উৎসব হিসেবে পালন করা হয়।
বাংলাদেশে মে দিবস প্রথম পালিত হয়েছিল ১৯৫৬ সালে। এটি তখন পাকিস্তানের একটি অংশ ছিল, যা বর্তমান বাংলাদেশের অংশ হিসেবে পরিণত হয়। মে দিবসের আগে, বাংলাদেশে প্রথম বাংলাদেশ শ্রমিক সংসদ গঠন করা হয় ১৯৪৯ সালে, যা পরে ১ মে মে দিবস হিসেবে পরিণত হয।
বাংলাদেশ সহ বিশ্বের ৯০টি দেশে সরকারিভাবে মে মাসের প্রথম দিনটিকে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। শ্রমিকদের অধিকার ও দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে মে দিবস পালিত হয়। স্বাধীনতার পর মে দিবস রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়। এটি শ্রমিক আন্দোলনের ঐতিহাসিক সংগ্রাম ও কৃতিত্বকে স্মরণ করার একটি দিন, উন্নত কাজের পরিবেশ, ন্যায্য মজুরি এবং শ্রমিকদের অধিকারের পক্ষে। বাংলাদেশে, মে দিবসটি সাধারণত শ্রম সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং বিভিন্ন সেক্টরে শ্রমিকদের কাজের অবস্থার উন্নতির দাবিতে ট্রেড ইউনিয়ন এবং শ্রমিক সংগঠনগুলি দ্বারা সংগঠিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান, বিক্ষোভ এবং সমাবেশের মাধ্যমে দিবসটি পালন করা হয়।
Leave a Reply