July 27, 2024, 7:36 am

জেলার অপর সম্ভাবনা মিঠা পানির শুঁটকি মাছ: দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে

জেলার অপর সম্ভাবনা মিঠা পানির শুঁটকি মাছ: দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে

নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরায় মিঠাপানির মাছ শুঁটকি শিল্পে অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। খেতে সুস্বাধু হওয়ায় সামুদ্রিক মাছের শুঁটকির পাশাপাশি দিনকে দিন মিঠা পানির মাছের শুঁটকির কদর বাড়ছে। সাতক্ষীরার উৎপাদিত শুঁটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন রপ্তানি হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। স্থানীয়রা বলছেন, যথাযথভাবে তদারকি আর সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে ভারতের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখানকার কার্পজাতীয় মাছের শুঁটকি রপ্তানি করে প্রচুর পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। বছরে কি পরিমান শুঁটকি সাতক্ষীরা থেকে উৎপাদিত হচ্ছে তার সঠিক তথ্য সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অধিদপ্তর জেলা অফিসে না থাকলেও স্থানীয় শুঁটকি উৎপাদনকারী ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে বছরে প্রায় ১ হাজার টন শুঁটকি উৎপদান করছেন তারা। এসব শুঁটকি মাছের মধ্যে রয়েছে কার্পজাতীয় মাছ সিলভার কার্প, মৃগেল, বাটা, তেলাপিয়া ও পুঁটি মাছ। প্রতি মণ শুঁটকির পাইকারি মূল্য ১৯ থেকে ২০ হাজার টাকা। তাতে ১ হাজার টন শুঁটকির আনুমানিক বাজর দাঁড়ায় প্রায় ৫০কোটি টাকা। ভারতের পাশাপাশি কার্পজাতীয় এসব মাছের শুঁটকি দেশের উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় এবং চট্টগামে রপ্তানি হচ্ছে। ফলে একদিকে মাছ চাষীরা যেমন ভালো দাম পাচ্ছেন, অন্যদিকে শুঁটকি উৎপাদন করেও লাভবান হচ্ছেন স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অফিসের তথ্য মতে, চলতি বছর জেলার মোট ৭টি উপজেলায় ৬৩ হাজার জলাশয়ে (পুকুর, ঘের, খাল ইত্যাদি) ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে মিঠা পানির মাছ চাষ করা হচ্ছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার টন। ২০০ টাকা কেজি দরে যার বাজারমুল্য দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
জেলা মৎস্য অফিসার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান জানান, কার্প জাতিয় মাছের শুঁটকি উৎপাদনে সাতক্ষীরার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এ জেলা থেকে বছরে বিপুল পরিমান মিঠাপানির মাছ উৎপাদন হয়। যা থেকে শুঁটকি উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করাও সম্ভব। তবে কি পরিমাণ শুঁটকি উৎপাদন হয় তার সঠিক তথ্য সংরক্ষণ নেই মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে। তবে শুঁটকি উৎপাদনের সাথে সংশিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বছরে আনুমানিক ১ হাজার টন শুঁটকি উৎপাদিত হয় সাতক্ষীরা জেলায়। সাধারণত সিলভার কার্প, পুঁটি, মৃর্গেল, তেলাপিয়া ও বাটা মাছ।
তালা উপজেলার ত্রিশমাইল এলাকায় শুঁটকি ব্যবসায়ী নিপেন দাস ও খামার মালিক রমেশ চন্দ্র খাঁ জানান, তারা দুই বছরের বেশি সময় ধরে তিনি শুটকি মাছের আড়ৎ বানিয়েছেন। তিনি প্রতিমাসে ৪ হাজার কেজির মতো শুঁটকি বানিয়ে থাকেন। বিনেরপোতার আরো এক স্থানীয়ভাবে কম দামের ছোট তেলাপিয়া দিয়ে তিনি শুঁটকি তৈরি করেন। এসব শুঁটকি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন পোল্ট্রি ও মাছের ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করেন।
সাতক্ষীরা বিনেরপোতা এলাকার শুঁটকি উৎপাদনকারী সাধন চন্দ্র রায় জানান, প্রতি মাসে প্রায় ৮ হাজার কেজি শুঁটকি মাছ উৎপাদন করেন। গত ৪ বছর যাবত তিনি শুঁটকি মাছ তৈরি করছেন। তিনি সাধারণত সিলভার কার্প, মৃগেল, বাটা, তেলাপিয়া ও পুঁটি মাছ কিনে বেতনা নদীর ধারে তার খামারে শুঁকিয়ে থাকেন। এসব শুটকি চট্টগ্রাম ও উত্তরবঙ্গের সৈয়দপুরে সরবরাহ করেন। প্রতি মণ শুঁটকির পাইকারি মাদ ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা।
সৈয়দপুরের শুটকি আড়তদার মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বলেন, প্রতি মৌসুমে সাতক্ষীরা থেকে বিপুল পরিমাণ শুঁটকি মাছ তিনি সংগ্রহ করেন। পরে এসব শুঁটকি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তিনি সরবরাহ করেন। তিনি জানান, রান্না করে খাওয়ার জন্য সিলভার কার্প মাছের শুটকি উত্তরাঞ্চলে ব্যাপক চাহিদা। আর তেলাপিয়া মাছের শুটকি কাঁকড়ার খাবার হিসেবে ব্যবহার করে। আর পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পুটি মাছের শুঁটকির বেশ চাহিদা। তিনি পশ্চিমবঙ্গে বিপুল পরিমান পুটি শুঁটকি রপ্তানি করে থাকেন বলে জানান।

 


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2023 satkhirachitra.com
Design & Developed BY CodesHost Limited