October 18, 2024, 6:16 am

তালার খেশরায় নেট পাটা দিয়ে বাধাসৃষ্টি করায় পানিবন্দি ৪০ হাজার মানুষ।

তালার খেশরায় নেট পাটা দিয়ে বাধাসৃষ্টি করায় পানিবন্দি ৪০ হাজার মানুষ।

ইয়াছীন আলী সরদার
সাতক্ষীরা তালা উপজেলার খেশরা ইউনিয়নের সরকারী খাল ও নদীতে প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে নেট পাটা দিয়ে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্থ করেছে। ফলে নদী ও খালের পানির শ্রোত ধীরগতি হওয়ায় গত ১৫ দিন ধরে ইউনিয়নটির ৪০ হাজার মানুষ পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে। অনেকে গৃহহীন হয়ে আশ্রয় নিয়েছে খেশরা ইউনিয়নের শাহপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,শাহপুর দাখিল মাদরসাহ সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ব্রিজ ও উচু স্থানে।
সুত্রে জানা যায়, গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে কপোতাক্ষ নদের তীর ঘেঁসে গড়ে উঠা খেশরা ইউনিয়ন ৯টি ওয়ার্ডের সমন্বয়ে ২১টি গ্রামের মধ্যে ১৮টি গ্রামই তলিয়ে গেছে। ইউনিয়নটির উত্তরে জালালপুর, পূর্বে-কপোতাক্ষ, দক্ষিণে-আশাশুনি উপজেলা এবং পশ্চিমে সাতক্ষীরা সদর অবস্থিত। ইউনিয়নটির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত মাদিয়ার খাল, শালিকা খাল, ছোট চর এবং বালিয়ার খাল পলিপড়ে ভরাট হয়ে গেছে। এছাড়া অবৈধ দখলদারা এসব খালে নেট-পাটা বিছিয়ে মাছ চাষ করায় পানি সরবরাহ সিমীত হয়ে আসায় অল্প বৃষ্টিপাতেই এলাকাটি জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ৩৫ হাজার ১৭০.৮৩ বিঘা জমি দ্বারা বেষ্টিতি ইউনিয়নটির ২৫ হাজার বিঘা জমি এখন পানির তলে।
সরেজমিনে দেখা যায়-চলতি বছরের বন্যা পরিস্থিতি উপজেলার অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে ভয়াবহ বন্যায় পরিনত হয়। ফলে হাজারো মানুষ গৃহহীন হয়ে আশ্রয় নিয়েছে স্থানীয় স্কুল ও মাদ্রাসা সমূহে। ভেঙ্গে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্য সেবা। দেখা দিয়েছে রোগব্যাধি। দ্বিপের উপর প্রতিষ্ঠিত ইউনিয়নটির স্বাভাবিক কার্যক্রমে এসেছে স্থবিরতা। শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন ও খেলাধুলায় ইউনিয়নটির বিশেষ সূনাম থাকলেও জলাবদ্ধতায় ইউনিয়নটি তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।
খেশরা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান শেখ কামরুল ইসলাম (লাল্টু) জানান, তার ইউনিয়নের ১৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এলাকার বেশিরভাগ ঘের ও ফসলি জমি ভেসে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও মন্দির এমনকি মানুষের বাড়ি-ঘরে পানিতে তলিয়ে গেছে।
খেশরার জলাবদ্ধতার কারন অনুসন্ধানে দেখা যায়, বেতনার ভাঙনে পানি এলাকায় প্রবেশ করলেও সেই গতিতে বের হতে পারছেনা। নেট পাটা দিয়ে পানির শ্রোত গতিরোধ করা হয়েছে। বিগত সরকারের প্রভাবশালীরা ম্যানেজ করে তাদের অতীতের কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন যে কারনে সাধারণ মানুষ ভয়ে মুখ খুলছেন না। এছাড়া শালিখার পুরাতন স্লুইস গেইটের ১৫ টি পাটার(গেইট) ৮টি খোলা, বন্ধ আছে ৭টি। বন্ধ পাটাগুলো খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করলে দ্রুত পানি নিস্কাষন সম্ভব। এ দিকে পাইকগাছা-তালা-আশাশুনির গাবতলা পাপুড়িয়া নদীর গোড়ায় স্লুইচ গেইটটির পলি অপসারন করতে পারলে খেশরা, খলিষখালি সহ এলাকার পানি দ্রুত নিস্কাষন ও স্থায়ী জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে হাজারো মানুষ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোঃ রাসেল জানান, প্লাবিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে পানি সরানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নিজে উপস্থিত থেকে বিভিন্ন খাস খাল দখলমুক্ত করে পানি নামানোর ব্যবস্থা করছেন। এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য সকল ইউপি ও সরকারি দফতরে তথ্য চাওয়া হয়েছে। জেলাপ্রশাসকের কাছে দ্রুত সমাধানের জন্য আর্থিক চাহিদা দেয়া হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা খাতুন জানান, খেরশা ইউনিয়নটিতে কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা স্নিগ্ধ্যা খা বাবলি জানান, উপজেলায় ৫২০টি মাছের ঘের সম্পূর্ণরুপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ৮২৭ দশমিক ৪৫ টন মাছ ভেসে গেছে। নেট পাটা অপসারনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়ের সাথে থেকে আমরা সর্বাতœক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2023 satkhirachitra.com
Design & Developed BY CodesHost Limited