November 21, 2024, 8:33 am

আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস উপলক্ষে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন

আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস উপলক্ষে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন

শাহ জাহান আলী মিটন,সাতক্ষীরা প্রতিনিধি :
সংঘাত নয়, ঐক্যের বাংলাদেশ গড়ি’
এই শ্লোগানে আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস ২০২৪ উপলক্ষে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

বুধবার(২ অক্টোবর) সকালে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে পিস ফ্যাসিলিটেটর গ্রুপের আয়োজনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সাবেক অধ্যক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ সরকার।

জেলা বাসদের সমন্নয়ক নিত্যা নন্দ সরকারের সঞ্চালনায় মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন,সাবেক অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহী, সাতক্ষীরা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. মো. আক্তারুজ্জামান, গণফোরাম নেতা আলিনুর খান বাবুল, কবি স ম তুহিন, আরশি বাউল আমিনুর রশীদ, সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সাতক্ষীরার সাধারণ সম্পাদক মো. হেদায়েত উল্লাহ, নারী নেত্রী ফরিদা আক্তার বিউটি, আবু কাজী প্রমুখ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ২০০৭ সালের ১৫ই জুন আতিসংঘের সাধারণ সভায় ২ অক্টোবর-কে বিশ্বে শান্তি, সহিষ্ণুতা, সহানুভূতিশীলতা এবং অহিংসার সংস্কৃতি সুরক্ষিত করতে আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস হিসেবে উদযাপনের ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিবসটি উদযাপিত হয়ে আসছে।

এরই ধারাবাহিকতায় দি হাঙ্গার প্রজেক্ট ২০১৭ সাল থেকে পিস ফ্যাসিলিটিটেটর গ্রুপ (পি.এফজি), সুজন ও ইয়ুষ এন্ডিং হাঙ্গারসহ বিভিন্ন সংগঠনের অংশগ্রহণে মানববন্ধন ও শান্তি পদযাত্রাসহ বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে সারাদেশে আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস পালন করে আসছে। সংঘাত নয়, ঐক্যের বাংলাদেশ গড়ি’ শ্লোগানকে সামনে রেখে এই প্রকল্পের কর্ম এলাকায় এবছরও দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে।

বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস উদযাপনকে আমরা গভীর তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিবেচনায় করছি। অনেক অর্জনের মধ্যেও নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতা, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়ন, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গীবাদ আমাদের এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের অভিজ্ঞতার মধ্যদিয়ে আমরা যাচ্ছি। একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন নিয়ে এ জাতি মুক্তিযুদ্ধ করলেও স্বাধীনতা প্রাপ্তির অর্ধশতাব্দী পরেও আমরা দেখছি যে, আমাদের সেই স্বপ্ন আজও পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। বর্তমানে সহিংসতামুক্ত শান্তিপূর্ণ সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ তৈরী হয়েছে। এই দিবসের বিভিন্ন কর্মসুচির মধ্য দিয়ে আমরা ঐকা ও শান্তির বার্তা সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে চাই। বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ এবং পরস্পরের প্রতি সদভাবাপন্ন। এদেশে প্রতিটি ধর্মের মানুষ চিরায়তকাল থেকে পাশাপাশি বসবাস করে আসছে। প্রতিটি ধর্মের মর্মবাণী হলো, শান্তি, সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য। ইসলাম ধর্মের পবিত্র কোরআন এর সুরা আন নিসা ১১৪ তে বর্ণিত আয়াতে তিনটি কাজকে উত্তম বলে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রথমত দান-খয়রাত, দ্বিতীয়ত সৎকাজ ও তৃতীয়ত পারস্পরিক অহিংসা। হিন্দু ধর্মের মহাভারতের মহাপ্রস্থানিক পর্বের শ্লোকে অহিংসার গুরুত্বের ওপর জোর দেয়া হয়েছে, অহিংসা হল সর্বোচ্চ। ধর্ম, অহিংসা হল সর্বোচ্চ আত্মনিয়ন্ত্রণ। বুদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধ বলেছেন, ‘অহিংসা আপনার মনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে। যিশু খ্রিস্ট তাঁর অনুসারীদের অহিংসা এবং শত্রু-প্রেমের ছন্দ অনুসরণ করতে বলেছিলেন, তোমার শত্রুদের ভালবাসো, যারা তোমাকে ঘৃণা করে তাদের ভালো কর, যারা তোমাকে অভিশাপ দেয় তাদের আশীর্বাদ কর এবং যারা তোমাকে অপব্যবহার করে তাদের জন্য প্রার্থনা কর।

অন্যদিকে সাংবিধানিক আকাকো অনুযায়ী আজও আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ও ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ। বহুমত ও বহুপথকে ধারণ করে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ক্রমেই যেন ফিকে হয়ে আসছে আমাদের রাজনীতিতে। একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে গতিশীল করতে ও সামাজিক ন্যায়বিচারকে প্রতিষ্ঠিত করতে রাজনৈতিক দলসমূহের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতির কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে, আজকের দিনের যুব সমাজ আগামী দিনের নেতৃত্ব। এই যুব সমাজের মধ্যে যদি শান্তি, সম্প্রীতি এবং অহিংস মূল্যবোধের চর্চা-চর্যা ঘটানো সম্ভব না হয় তাহলে আগামী দিনের বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি মুখ থুবড়ে পড়বে। তাই, সুখী, সুন্দর, হাসি-গানে মুখরিত মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণে সংঘাতের রাজনীতি পরিত্যাগ করে অহিংস আন্দোলনকে বুকে ধারণ করে সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চা করতে হবে।

শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয়, বৈশ্বিক পরিস্থিতিও আজ অত্যন্ত অস্থিরতাপূর্ণ এবং সংঘাতময়। ধর্মীয় মৌলবাদ ও জঙ্গীরাণী শক্তির অপতৎপরতা, জাতিগত ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত যেভাবে দেশে-দেশে ছড়িয়ে পড়ছে, তা মানুষের সমাজে কখনো কাম্য নয়। এমনই এক বিমানবিকীকরণ পরিস্থিতিতে আমরা সবাই যদি স্ব স্ব অবস্থান থেকে জেগে না উঠি, তবে এক অন্ধকারাচ্ছন্ন ভবিষ্যত আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। তাই অহিংসার বাণী এবং শান্তি ও সম্প্রীতির আহ্বান নিয়ে, হাতে হাত রেখে পারস্পরিক সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সম্মিলিতভাবে আমরা দিবসটি উদযাপন করছি।

আসুন, আন্তর্জাতিক অহিংস দিবসে দাঁড়িয়ে আমরা আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তি সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা তথা বিশ্বমানবতার শান্তির সপক্ষে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাই, আহ্বান জানাই অধিকারের প্রশ্নে মানুষকে সচেতন, সংগঠিত ও সোচ্চার হওয়ার। কেননা সংগঠিত মানুষের সমন্বিত শক্তি ও কার্যকর উদ্যোগই পারে সমাজ বিবর্তনকে ইতিবাচকভাবে তরান্বিত করতে। আমরা সে লক্ষ্যে এগিয়ে যাই। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অহিংস দিবসের এই কর্মসূচি থেকে আমরা জোরালো কন্ঠে আওয়াজ তুলি,সংঘাত নয় ঐক্যের বাংলাদেশ গড়ি।সহিংসতা বন্ধ করি, সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ি।অহিংস নীতি গ্রহণ করি, শান্তি সম্প্রীতির বিশ্ব গড়ি।হিংসা বিদ্বেষ ত্যাগ করি সামাজিক সম্প্রীতি গড়ে তুলি।সন্ত্রাস ও সহিংসতা বন্ধ করি, শান্তি ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ি।গণতান্ত্রিক চেতনা লালন করি শান্তি-সম্প্রীতির দেশ গড়ি।দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি নয় শান্তি প্রতিষ্ঠায় চাই আদর্শবাদী রাজনীতি।সন্ত্রাস, সহিংসতাকে না বলি,সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ি।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2023 satkhirachitra.com
Design & Developed BY CodesHost Limited