October 18, 2024, 6:16 am

আশাশুনির মরিচ্চাপ নদীর বাঁকড়া ‘কালভার্ট’ ভেঙে পড়ায় চরম জনদুর্ভোগে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ পথচারীরা

আশাশুনির মরিচ্চাপ নদীর বাঁকড়া ‘কালভার্ট’ ভেঙে পড়ায় চরম জনদুর্ভোগে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ পথচারীরা

আব্দুর রাজ্জাক :
আশাশুনির মরিচ্চাপ নদীর উপর নির্মিত বাঁকড়া ‘কালভার্ট’ ভেঙে পড়ায় চরম জনদুর্ভোগ স্বীকার হচ্ছে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ পথচারীরা। ইতোমধ্যে জোয়ার ভাটায় কালভার্টের একদিকের সংযোগ সড়কে ভাঙন দেখা দেওয়ায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপজেলা প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী পথচারীরা।
মঙ্গলবার বিকেলে আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষ্ণা রায়ের পক্ষে সরজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাশেদ হোসাইন। এসময় তিনি কালভার্টটি ভেঙে পড়ায় নদীর দুপারের সাধারণ মানুষের কি কি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শুনে কর্তৃপক্ষকে জানাবেন বলে তাদের আশ্বস্ত করেন।
কালভার্টটির পশ্চিম পাশে শোভনালী ইউনিয়ন ও পূর্ব দিকে বুধহাটা ইউনিয়ন। পশ্চিম দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ব্যাংদহ বাজার এবং সাতক্ষীরা জেলা সদরে যাতায়াতের যেমন সহজ পথ তেমনি পূর্ব দিকে বুধহাটা বাজার ও আশাশুনি সদরে যাতায়াতের সহজ পথ। পাশে ঐতিহ্যবাহী কুন্দুড়িয়া হাইস্কুল। স্কুলটিতে শোভনালী ইউনিয়নের প্রায় ২ শতাধিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। তাই এটা অতি জনগুরুত্বপূর্ণ কালভার্ট বলে মনে করেন স্থানীয়রা। কুন্দুড়িয়া হাইস্কুল এর প্রধান শিক্ষক আরিফুল ইসলাম জানান, শোভনালী ইউনিয়ন থেকে বাঁকড়া কালভার্ট ও কামালকাটি কালভার্ট পার হয়ে ২২০ জন ছেলে মেয়ে আমার স্কুলে পড়াশোনা করে। বাঁকড়া কালভার্ট হেঁটে পার হওয়া গেলেও কামালকাটি কালভার্ট পার হয়ে ছেলে মেয়েরা স্কুলে আসতে পারছে না। তাই তাঁরা প্রায় আড়াই কিলোমিটার ঘুরে ঝুঁকিপূর্ণ ওই বাঁকড়া কালভার্ট পার হয়ে স্কুলে আসতে বাধ্য হচ্ছে। সে জন্য উপস্থিতির হার কম হচ্ছে এবং এসব ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা বিঘ্নিত হচ্ছে। তাই বিকল্প ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
পশ্চিম পারের অধিবাসী গ্রাম্য ডাক্তার রোকনুজ্জামান জানান, মরিচ্চাপ নদী যখন মৃতপ্রায় অবস্থায় ছিল তখন এখানে আগে খেয়া চলতো। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে ৫৪ লক্ষ ৪ হাজার ৬৫০ টাকা বরাদ্দ দিয়ে ৬০ ফুট একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। গত বছর মরিচ্চাপ নদী খননের সময় কালভার্টটির মাঝ বরাবর ভেঙে পড়ে। প্রায় এক বছর ধরে ভাঙা এ কালভার্ট দিয়ে সাধারণ মানুষ, ইঞ্জিন চালিত ভ্যান, মোটরসাইকেল, ইজিবাইক চলাচল করেছে। কিন্তু নদীতে জোয়ার ভাটা শুরু হওয়ায় জোয়ারের পানি কালভার্টের নিরাপত্তা বেষ্টনীর উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় ফলে এসময় সাধারণ মানুষ ও কোন যানবাহন চলাচল করতে পারে না। এরমধ্যে কালভার্টের শোভনালী অংশের সংযোগ সড়কে ভাঙন দেখা দেওয়ায় নতুন করে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। সংযোগ সড়ক ভেঙে গেলে কালভার্টে ওঠার পথ থাকবে না। দুর্ভোগ লাঘবে উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করলে কোন দফতর এর দায় নিতে চায় না।
তাই জনগুরুত্বপূর্ণ এ কালভার্টটি যদি মেরামত করা যায় ভালো না হয় বিকল্প ব্যবস্থা নিতে তিনি প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মোটরসাইকেল ও ভ্যান চালক জোয়ারের পানি ঠেলে পারাপার করছেন। তাদের সাথে কথা বললে জানান, কষ্ট করে এ ৬০ মিটার পার হতে পারলে অতিরিক্ত ১০ কি.মি. পথ ঘুরে যেতে হবে না।
সালমা খাতুন নামে এক পথচারীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঘুরে যেতে হলে অতিরিক্ত টাকা লাগে এবং সময় নষ্ট হয় তাই নারী শিশুরা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছে। জোয়ারের সময় সমস্যা বেশি হয় কারণ বাচ্চা ধরবো, না নিজের কাপড় সামলাবো নাকি প্রবল স্রোতের মোকাবেলা করবো! ঝুঁকি মুক্ত বিকল্প ব্যবস্থা না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে তাঁরা আশঙ্কা করছেন।
অতি জনগুরুত্বপূর্ণ কালভার্টটি মেরামত না হয় বিকল্প চলাচলের উপযোগী কোন ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2023 satkhirachitra.com
Design & Developed BY CodesHost Limited