September 19, 2024, 12:53 am

তিনদিনের ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকা, ঝুঁকিতে রয়েছে কয়েকটি ভেড়িবাঁধ

তিনদিনের ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকা, ঝুঁকিতে রয়েছে কয়েকটি ভেড়িবাঁধ

শাহ জাহান আলী মিটন, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে সাতক্ষীরা শহরের বিভিন্ন এলাকা এবং ঝুঁকিতে রয়েছে কয়েকটি ভেড়িবাঁধ । থেমে থেমে হচ্ছে ভারী বৃষ্টি, সেই সঙ্গে বইছে ঝড়ো হাওয়া।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী,গত শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিপাত মঙ্গলবার পর্যন্ত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, শহরের ইটাগাছা,মিলবাজার, কামালনগর, শাল্যে,মাছখোলা, মধুমোল্লারডাঙ্গী, বকচরা, রইচপুর, কুকরালী রাজারবাগ, বদ্দীপুর কলোনি, মধ্য কাটিয়া, বাকাল, সুলতানপুর, মুনজিতপুর, কলেজ মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় গোড়ালি থেকে হাঁটুসমান পানিতে রাস্তা তলিয়ে গেছে।
বৃষ্টিতে এই জলাবদ্ধতার কারণে বিরক্ত মানুষ। ৯ নং ব্রাক্ষরাজপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ১নং ওয়ার্ডের সদস্য মোঃ নুরুল হুদা জানান শহরের বৃষ্টির পানি আমাদের ওয়ার্ডের উপর দিয়ে বেতনা নদীতে নিষ্কাশন হতো, এই মুহূর্তে পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা না থাকায় আমাদের শাল্যে গ্রাম সহ ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে। আমি মাননীয় জেলা প্রশাসকের কাছে সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি যাতে আমাদের এই পানি দ্রুত নিস্কাশনের ব্যাবস্থা করে দেন এবং কিছু সাহায্য সহযোগিতা করেন।

সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়া এলাকার শিক্ষার্থী অর্পণ বসু বলেন, ‘জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসনের দাবিতে মানববন্ধন করেছি, কিন্তু কোনো ফল আমরা পাইনি। কয়েক দিন আগে কিছু পানি কমেছিল, বৃষ্টির কারণে সব আবার ডুবে গেছে। ড্রেন করেছিল পানি খালে গিয়ে পড়বে বলে, কিন্তু শহরের পানি সব আমাদের এদিকে আসে। বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না। রান্নাবান্নাও করতে পারছে না, চুলায় পানি।
সদর উপজেলার শাল্যে গ্রামের বাসিন্দা সলিমুল্লাহ সুজন জানান, আমরা পানির ভিতর খুব অসুবিধায় আছি, টানা কয়েকদিন বৃষ্টির কারণে আমাদের ঘর বাড়ি পানির নিচে তলিয়ে গেছে, পানি নিস্কাশনের কোন ব্যাবস্থা নেই,রান্না খাওয়া হচ্ছে না, শৌচাগার পানির নিচে থাকায় এলাকায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
একই এলাকার বাসিন্দা আশুতোষ মহলদার জানান, এই কয়েকদিন বৃষ্টির কারণে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে আমরা ঘর থেকে বাহির হতে পারছি না, ঘর বাড়ি মৎস্য ঘের সহ সবকিছু তলিয়ে গেছে, আমারা কোন সাহায্য সহযোগিতা পাচ্ছি না খুব কষ্টে আছি, তাই সরকারের কাছে আবেদন করবো আমাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করার জন্য।

জলবদ্ধতার কারণে মানুষ দিন দিন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে জানিয়ে হাসিবুল হোসেন বলেন, মসজিদে নামাজ হচ্ছে না ঠিকমতো।
পানি নিস্কাশনের কোন ব্যাবস্থা নেই, আমাদের নদীতে পানি না সরাই এবং অপরিকল্পিত ভাবে মৎস্য ঘের করার কারণে এই বন্যার পানি নিস্কাশন হচ্ছেনা।

পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড কাঠিয়া মাঠপাড়া এলাকার রুবিনা খাতুন বলেন, ‘ছেলেমেয়ে নিয়ে এই পানিতে কষ্ট হচ্ছে আমাদের। বাজার করতে পারছি না। রানবো বাড়বো কেমনে, চুলায় পানি। এই পানি প্রায় ছয় সাত মাস থাকবেই।

গদাই বিল এলাকার মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘এই যে দুর্ভোগ কী বলব! এই দুর্ভোগের ভেতরে আমরা পড়ে আছি। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। রোগ ছড়াচ্ছে। চুলকুনি তো এখনই শুরু হয়ে গেছে। সব বাড়ির ভিতরে পানি, বাথরুমে পানি।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত হচ্ছে জানিয়ে সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী জানান , শুক্রবার বৃষ্টিপাত ছিল ৪৪ মিলি মিটার শনিবার ৯৪ মিলি মিটার রবিবার ৫৯ মিলি মিটারসহ সোমবার সকাল পর্যন্ত মোট ১৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছির। সাগরের নিম্ন চাপ কেটে গেলেও আগামী মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টিপাত থাকতে পারে।

এদিকে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ ভেড়িবাদ পরিদর্শন করেছেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোয়াইব আহমেদ। তিনি বলেন, সাতক্ষীরা সদরের বিনেরপোতা,আমতলাসহ কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সরজমিনে গিয়ে দেখেছি এবং সংস্কার কাজ চলছে।এছাড়া পানি নিষ্কাশনের জন্য কয়েকটি সুইজগেট খুলে দেয়া হয়েছে। ইনশাল্লাহ অতি দ্রুত পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা করা হবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2023 satkhirachitra.com
Design & Developed BY CodesHost Limited