November 21, 2024, 8:57 am

সাফজয়ী ফুটবলার রাজিয়া সুলতানার বাড়িতে চলছে কান্না

সাফজয়ী ফুটবলার রাজিয়া সুলতানার বাড়িতে চলছে কান্না

 সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ গত শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে রাজিয়াদের জরাজীর্ণ বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িজুড়ে যেন চলছে বোবা কান্না। মা আবিরন বিবি নলকূপের পাশে বসে মেয়ে রাজিয়া সুলতানার ছবি নিয়ে কী সব ফিসফিস করে বলছেন। আবার কখনো চিৎকার করে কান্না করছেন ‘রাজিয়া, রাজিয়া’ বলে। মা যাতে বুঝতে না পারেন, এ জন্য নীরবে কান্নাকাটি করছেন বাড়িতে থাকা রাজিয়ার ছোট ভাই ফজলুর রহমান আর মেজ বোন নাজমা খাতুন। প্রতিবেশীরা বলছেন, রাজিয়া চলে যাওয়ায় সরদারপাড়ায় আর আনন্দ নেই। ঈদে তেমন আনন্দ হয়নি। এবার গ্রামজুড়ে সবার মধ্যে শোকের ছায়া।
সাতক্ষীরা শহর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে লক্ষ্মীনাথপুর গ্রাম। এই গ্রামের নূর আলী আর আবিরন বিবি দম্পতির দুই ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে সবার ছোট রাজিয়া। গ্রামের দরিদ্র পরিবারের মেয়ে রাজিয়া সুলতানা (২১) সব প্রতিকূলতা জয় করে নারী ফুটবলে তৈরি করেছিলেন নিজস্ব অবস্থান। কিন্তু সাফজয়ী এ ফুটবলার নিয়তির কাছে হেরে গিয়ে পৃথিবী থেকেই চিরবিদায় নিয়েছেন। গত ১৩ মার্চ রাতে সন্তান জন্মের কয়েক ঘণ্টা পর অসুস্থ হয়ে রাজিয়া সুলতানা মারা গেছেন।

গত বছর ঈদুল ফিতরের দুই দিন আগে গ্রামের বাড়ি এসেছিলেন সাফজয়ী ফুটবলার রাজিয়া সুলতানা। এসেই আশপাশের সবার খোঁজখবর নিয়েছেন। সেই স্মৃতির কথা জানিয়ে প্রতিবেশী হালিমা খাতুন বলছিলেন, ‘ঈদের দিন রাজিয়া কোথাও বের হলো না। ঘরে ছেলো। আর বাড়িতে যেন বাজার বসেছিল। ওর সব বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনে ভরে গেল। আর এবার ওগে বাড়িতে কে খেল, না খেল, কেউ দেখতে এল না। রাজিয়া চলে গে, আর বাড়ি যেন শ্মশান হয়ে গে। সত্যি সত্যি বাড়ি যেন মরে গে।’
‘রাজিয়া থাকলে বাড়ি হাসত। আর এখন বাড়ি কানা। এক মাস হতে পারেনি, এখন কেউ আসে না বাড়িতে। ঈদের আগে-পরে কেউ খোঁজখবর নেয়নি।’ রাজিয়ার মা আবিরন বিবি এর বেশি আর কিছু বলতে পারলেন না। কান্নায় তাঁর গলা ধরে আসে।

মেজ বোন নাজমা খাতুন বলেন, ‘ঈদ এ বাড়ি থেকে উঠে গেছে। ওর (রাজিয়া) মৃত্যুর আগে আল্লাহ আমারে নিল না কেন। ও ছিল এ বাড়ির আলো। এখন যেদিকে তাকাবেন শুধু অন্ধকার।’ কথায় কথায় তিনি বলেন, এবার ঈদের তাঁদের দুই বোনের ছেলে-মেয়েদের জন্য নতুন পোশাক কেনা হয়নি। ৮-১০ বছর ধরে ঈদে সবার নতুন পোশাক কিনে দিতেন রাজিয়া। প্রতিবেশী ছোট ছোট শিশু ও আত্মীয়স্বজনকেও নতুন জামা কিনে দিতেন। এবারও বলেছিলেন, ঈদের আগে ঢাকায় গিয়ে ব্যাগ ভর্তি করে সবার জন্য জামাকাপড় কিনে নিয়ে আসবেন। এ বাড়িতে এবার ঈদের দিন সেমাই-পায়েস কিছু রান্না হয়নি। একরকম চুলা জ্বলেনি। ঈদের দিন বাড়িতে কচুলতা আর ভাত রান্না হয়েছিল।

কথা বলতে বলতে প্রতিবেশী হলিমা খাতুন ও ফুফাতো বোন হিরা খাতুনও যোগ দিলেন। বলেন, এ লক্ষ্মীনাথপুর গ্রাম থেকে লক্ষ্মী চলে গেছে। শুধু রাজিয়াদের বাড়িতে কেন, সরদারপাড়ায় ঈদ আনন্দ হয়নি। অধিকাংশ বাড়ির ছেলে-মেয়েরা নতুন জামাকাপড় পরেনি। শিশুরা হইহুল্লোর করে বেড়ায়নি। যেন পাড়াজুড়ে শোকের ছায়া।’

বাড়িতে কথা বলার ফাঁকে নাজমা খাতুন জানান, ২৮ রোজায় রাত ১২টার দিকে রাজিয়ার স্বামী ইয়াম রহমান এসেছেন। এসে রাজিয়া ও তাঁর বাবা নূর আলী সরদারের কবর পাকা করেছেন। রাজিয়া আর রাজিয়ার বাবার কবরের কাছে গিয়ে দেখা গেল, কবরের দেয়াল ধরে দাঁড়িয়ে আছেন রাজিয়ার মা আবিরন বিবি।

নাজমা আরও বলেন, রাজিয়ার নামের সঙ্গে মিলিয়ে ছেলের নাম রাখা হয়েছে রাজিম রহমান। এখন সে দাদি রোকেয়া রহিমের সঙ্গে রাঙামাটিতে আছে। আগামী ঈদে তাকে এখানে নিয়ে আসার কথা রয়েছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2023 satkhirachitra.com
Design & Developed BY CodesHost Limited