November 21, 2024, 8:33 am

সাতক্ষীরার রফিকুল– সেমাই না পেয়ে ঘর ছেড়েছিলেন, ৩৪ বছর পর ফিরে মায়ের হাতে সেমাই খেলেন

সাতক্ষীরার রফিকুল– সেমাই না পেয়ে ঘর ছেড়েছিলেন, ৩৪ বছর পর ফিরে মায়ের হাতে সেমাই খেলেন

(আশাশুনি) সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ ৩৪ বছর পর ঘরে ফিরলেন সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ইউনিয়নের নৈকাটি গ্রামের মতলেব সরদারের ছেলে রফিকুল ইসলাম (৫৭)। এখন থেকে ৩৪ বছর আগে রোজার ঈদে সেমাই না পেয়ে অভিমানে ঘর ছেড়েছিলেন তিনি। এত বছর পর গত সোমবার তিনি ঘরে ফেরেন। এবার ঈদে তিনি মায়ের হাতে সেমাই খেয়েছেন।

১৯৯০ সালে পবিত্র ঈদুল ফিতরের সময় রফিকুলের বাবা দোকান থেকে সেমাই আনতে পারেননি। এ নিয়ে তিনি অভিমান করে বাড়ি ছাড়েন। সেই কথা মনে করে মা শুকজান বিবি বলেন, বড় ছেলে রফিকুল বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পর তিনি সেমাই খাননি ৩৪ বছর। এই ঈদে গতকাল বৃহস্পতিবার ছেলেকে নিজের হাতে সেমাই খাওয়াতে পেরে খুশি তিনি। ছেলের অনুরোধে নিজেও সেমাই খেয়েছেন। বললেন, ‘আজ আমার মহাখুশির দিন। আমার বুকের ধন ফিরে আসায় আমি যারপরনাই খুশি।’

রফিকুলের ছোট ভাই মফিজুল ইসলাম বলেন, অভাবের কারণে তাঁর বাবা তখন সেমাই কিনতে পারেননি। এ নিয়ে মা–বাবার সঙ্গে রাগ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান বড় ভাই। সবাই মিলে খোঁজাখুঁজি করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। গত সোমবার সন্ধ্যার দিকে এক ব্যক্তি তাঁদের গ্রামের মসজিদে এসে মাগরিবের নামাজ আদায় করেন। পরে তাঁর বড় ভাই রফিকুল সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে জেনে ওই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি নিজেকে তাঁদের বড় ভাই রফিকুলের বড় ছেলে আবদুর রশিদ বলে পরিচয় দেন। একপর্যায়ে তাঁকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। তাঁর কাছ থেকে জানা যায়, তাঁদের বড় ভাই বর্তমানে কুমিল্লর মুরাদপুর উপজেলার চুলুরিয়া গ্রামে থাকেন।

আবদুর রশিদ বলেন, তাঁর বাবা মুরাদপুরের চুলুরিয়া গ্রামে তাঁর মাকে বিয়ে করেন। মা মারা যান ২০১৯ সালে। বাবার কাছে বারবার দাদার বাড়ির ঠিকানা জানতে চাইলেও তিনি কখনো তা প্রকাশ করেননি। পরের বছর বাবার কেনা জমির একটি দলিলে দাদার নাম-ঠিকানা পান। ঠিকানা পেয়ে দাদার বাড়িতে যাওয়ার কথা বললে বাবা বলেন, তাঁর মৃত্যুর পর সেখানে নিয়ে যেতে। অনেক অনুরোধ করার পর তিনি দাদার ঠিকানায় খোঁজ করার অনুমতি দেন। সে অনুযায়ী তিনি কুমিল্লা থেকে সাতক্ষীরায় আসেন এবং দাদার বাড়ির ঠিকানা খুঁজে পান। পরে তিনি চাচাদের কুমিল্লায় নিয়ে যান এবং তাঁদেরসহ বাবাকে নিয়ে আশাশুনিতে আসেন।

এ বিষয়ে বুধহাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক বলেন, রফিকুল ইসলাম বাড়ি থেকে চলে গেলে তাঁর বাবা মতলেব সরদার দীর্ঘদিন তাঁকে খুঁজেছেন। একপর্যায়ে হতাশ হয়ে আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। ৩৪ বছর পর সেই ছেলে ফিরে আসায় সবাই খুশি।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2023 satkhirachitra.com
Design & Developed BY CodesHost Limited