November 21, 2024, 8:49 am

সীমান্তে বেপরোয়া চোরাকারবারিরা অবিক্রিত হয়ে পড়ছে দেশীয় পন্য

সীমান্তে বেপরোয়া চোরাকারবারিরা অবিক্রিত হয়ে পড়ছে দেশীয় পন্য

আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোরাকারবারিরা। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে শুরু করে সারা রাত এসব ভারতীয় পন্য থ্রিপিচ, চিনি, মসলা, ভারতীয় মদ, কসমেটিকসহ বিভিন্ন পণ্য জেলার সীমান্ত পথ দিয়ে প্রবেশ করছে। নিত্য নতুন কৌশল অবলম্ভন করে এ সব পণ্য অবৈধভাবে নিয়ে এসে জেলা শহর থেকে শুরুকরে ছোট ছোট হাট বাজারে তা বিক্রি করছে। এসব মালামাল চোরাচালানিদের বিভিন্ন হাত ঘুরে সাতক্ষীরা, কলারোয়া হয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বিঘ্নে পৌঁছে যাচ্ছে। চোরাকারবারিরা স্থানীয় প্রশাসন ও বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট এবং এজেন্টকে সাথে নিয়ে এ সব মালামাল পাচার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে, ভারতীয় পন্য কিনে বেশী লাভ ও ক্ষতির ভয় না থাকায় বাংলাদেশী বড় বড় ব্যবসায়ীরা কম মূল্যের চাকচিক্যময় ভারতীয় পন্য কেনার দিকে ঝুকে পড়েছে। ফলে প্রতিদিন কলারোয়া সীমান্তে পথে কোটি কোটি টাকার উন্নতমানের কাপড় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে। ল্যান্ড বর্ডার বা ডাঙ্গা সীমান্তে বিএসএফ সাপ্তাহিক চুক্তিতে ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে তারকাটার বেড়ার গেট খুলে এবং নদী সীমান্তে নৌকাযোগে এসব নিন্মমানের পন্য পচারে সহায়তা করছে। চোরাচালানিদের অন্তদ্বন্দের কারণেই মাঝেমধ্যে কিছু চোরাই পণ্য ধরা পড়ে। কোনো কোনো সীমান্ত পয়েন্টে বিডিআরের চোখ ফাঁকি দিয়ে পাচার কাজ হলেও কোথাও আবার সীমান্তরক্ষীদের সঙ্গে গোপন যোগসাজশে এই চোরাচালান হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন লুঙ্গি, গামছা, তিল, সুপারী, চুল, ইলিশ মাছসহ কোটি কোটি টাকা মূল্যের চামড়া পাচার হয়ে যাচ্ছে ভারতে। ক্রেতারা সস্তা ও চাকচিক্যময় ভারতীয় পন্যের প্রতি বেশি আগ্রহী। ফলে অবিক্রিত হয়ে পড়ছে দেশীয় পন্য। এতে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
এর মধ্যে দেশের বড় বড় ব্যবসায়িরা কেউ চোরাই কেউবা পাসপোর্টে কলকাতা গিয়ে মাড়োয়ারী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পছন্দের মূল্যবান উন্নতমানের সুতি শাড়ী, কাতান, বেনারসি, সাউথ ইন্ডিয়ান সিল্ক, প্যাণ্ট পিস, শার্ট পিস, ওড়না, থ্রিপিস, টুপিস, গেজ্ঞি, জাঙ্গিয়া,পাজ্ঞাবী, শিশু পোষাক, বেডশীট, তোয়ালে বাছাই করে স্যাম্পল নিয়ে দেশে আসছেন। সীমান্তের একাধিক সুত্র জানায়, কলকাতার মাড়োয়ারী ব্যবসায়িরা কলারোয়া সীমান্তের চোরাচালান সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ব্যবসায়িদের বাছাই করা পন্য সামগ্রী টেলিফোনে অর্ডার পাওয়া মাত্রই বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে।
চোরাচালান সিন্ডিকেট কমিশনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার ভারতীয় পন্যের চালান বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের ঘরে পৌছে দিচ্ছে। আর ভারতীয় পন্য হাতে পাওয়ার পরে বাংলাদেশী ব্যবসায়িরা হুন্ডির মাধ্যমে ভারতীয় মহাজন-মাড়োয়ারদের মূল্য পরিশোধ করে থাকে। সাতক্ষীরা ও কলারোয়ায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বস্ত্র ব্যবসায়ী জানান, নিরাপদে পন্য পৌছানোর পরে টাকা পরিশোধ করতে হয় বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের।
কলারোয়ার ইলিশপুর, সরসকাটি, যুগীখালী, কামারালী, সিংগা মোড়, নকাটির বিল, সোনাবাড়িয়া মঠ, বড়ালী, লাঙ্গলঝাড়া থেকে কখনো ট্রাক, কখনো পিকআপ বোঝাই হয়ে এসব কাপড়ের গাট দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে। এছাড়াও কলারোয়া সীমান্ত পথে রোজা ও ঈদের জন্য প্রয়োজনীয় ময়দা, সুজি, ছোলা, বুট, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, জিরা, মরিচ, গুড়া মসলা, আতর, সেণ্ট, সেভিং ক্রীম, সেভিং লোশন, বডি লোশন, হাড়ি, কড়াই, রেডিও টেলিভিশনের যন্ত্রাংশ, সাইকেল, মটর সাইকেল ও তার যন্ত্রাংশ, বাস ট্রাকের ইঞ্জিন ও যন্ত্রাংশ, ঘর ওয়ারিংসহ বৈদ্যুতিক ও সেনেটারী সামগ্রী, সপিং ও পলিথিন ব্যাগ, ফেনসিডিলসহ নানা প্রকার মাদক দ্রব্য পাচার হয়ে আসছে।
সীমান্তে পণ্য সরবরাহে আগত বিভিন্ন কোম্পানীর ডেলিভারী ভ্যানে, রোগীবাহি এ্যাম্বুলেন্স ভরে এসব পণ্য দেশের অভ্যন্তরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে সুত্র জানায়। আবার মোটর সাইকেল, ইজিবাইক বা থ্রিহুইলারে ভরে এসব পণ্য বাগআচড়া বাজার, বাকড়া বাজার, কলারোয়া বাজার, কেশবপুর বাজার, রাজগঞ্জ বাজার, মনিরামপুর বাজার, নওয়াপাড়া বাজার,পাটকেলঘাট ও চুকনগর বাজারে নেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে কলারোয়ার মাদরা বিজিবি কোম্পানী কমান্ডার আফজাল হোসেন বলেন, তার এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অন্য এলাকা দিয়ে ভারতীয় পণ্য আসতে পারে।

 


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2023 satkhirachitra.com
Design & Developed BY CodesHost Limited