November 21, 2024, 8:57 am
জাতীয় সংসদে সাতক্ষীরা সদরের বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরলেন নব-নির্বাচিত সংসদ সদস্য আশরাফুজ্জামান আশু। বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রƒযারি) সন্ধ্যায় মহান সংসদে দাঁড়িয়ে ১১মিনিটের বক্তব্যে সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য আশরাফুজ্জামান আশু মহামান্য রাষ্ট্রপতির ভাষণকে ধন্যবাদ জানিয়ে সাতক্ষীরা পৌরসভার রাস্তাঘাটের বিধ্বস্ত চিত্র তুলে ধরেন। সংসদ সদস্য আশরাফুজ্জামান আশু ভোমরা স্থলবন্দরের অব্যবস্থাপনা ও বৈষম্যের কথা তুলে ধরেন। সংসদ সদস্য আশরাফুজ্জামান আশু বিএনপি সরকারের আমলে বন্ধ হয়ে যাওয়া সাতক্ষীরা সুন্দরবন টেক্সটাইল মিল চালু করার দাবি জানান। সংসদ সদস্য আশরাফুজ্জামান আশু দেশের অর্থনীতিতে সাতক্ষীরার চিংড়ি শিল্পের গুরুত্ব তুলে ধরেন। সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর এলাকায় একটি পুলিশ ফাঁড়ি ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার যৌতিক দাবি তুলে ধরেন।
সংসদ সদস্য আশরাফুজ্জামান আশু বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতির ভাষণ বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। মহামান্য রাষ্ট্রপতির ভাষণ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ার পরিপূর্ণ দলিল। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ১৪৩ পৃষ্ঠার ভাষণে উল্লেখ করে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরপেক্ষভাবে দেশ পরিচালনা করে যাচ্ছেন।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা। জেলা সদরে এসপি, ডিসি সবাই বসেন। সাতক্ষীরা পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের রাস্তা-ঘাট বিধ্বস্ত অবস্থায় আছে। ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে কয়েকটি ইউনিয়নে একটি সাথে আরেকটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলোর উন্নয়নের ছোয়া লেগেছে। জেলার অন্যান্য উপজেলায়ও লেগেছে। কিন্ত বিগত ১০বছরে সদর আসনে উল্লেখযোগ্য কোন কাজ হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরার জন্য অনেক কিছু দিয়েছেন। বিগত ১০বছর যিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেননি বলে এখন অনেক জায়গায় মাটির রাস্তা রয়েছে। দেশের আর কোন পৌরসভায় মাটির রাস্তা আছে বলে মনে হয় না। একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা হয়ে থাকে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের স্থল বন্দরের মধ্যে তৃতীয় স্থানে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ শ্যামনগরের ঐতিহাসিক জনসভায় ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর করার ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং সেটা বাস্তবায়িত হয়ে গিয়েছে। এখন কাস্টামস্ হাউস তৈরী এবং কাস্টমস্ কমিশনার বসিয়ে দেয় তাহলে যেমনিভাবে রাজস্ব আয় হবে। তেমনিভাবে সাতক্ষীরার ১০লাখ শ্রমিক নির্ভিঘেœ কাজ করতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সকল স্থলবন্দর যেভাবে চলে। ভোমরা স্থল বন্দরের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করে রেখে দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। মাত্র ৬৩ আইটেম নিয়ে ভোমরা স্থল বন্দর আমদানি করে থাকে। ১৯৯৬ সালে যখন এই স্থল বন্দরটি চালু হয় তখন সমস্ত মালামাল উন্মুক্ত ছিলো। কিন্তু দু:খের বিষয় আমাদের পার্শবর্তী বেনাপোল বন্দর দিয়ে সব পণ্য আমদানি রপ্তানি হচ্ছে। হিলি, সোনমসজিদ বন্দর দিয়ে সব কিছু আমদানি-রপ্তানি হচ্ছে কিন্তু ভোমরা দিয়ে হচ্ছে না কেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি যে শুল্ক স্টেশন থেকে পূর্ণাঙ্গ বন্দর হিসেবে ঘোষণা দিয়ে এসেছেন। কমিশনার বসার জায়গা হয়ে গিয়েছে। সেখানে এনবিআর আমাদের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ করছে। এই বন্দরে সকল পণ্য উন্মুক্তর দাবী করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, এই বন্দরে ১০হাজার শ্রমিক ও ৪ শতাধিক কর্মচারী কাজ করে। এখানে সোনালী ব্যাংকসহ ৭টি ব্যাংক রয়েছে। কিন্তু এখানে কোন পুলিশ ফাড়ি নেই। এখটি বিজিবি ক্যাম্পের উপর নির্ভর করে এই বন্দরটি চলছে। যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রধানমন্ত্রী দৃষ্টি আকর্ষণ করে ভোমরা বন্দরে একটি থানা, ফায়ার স্টেশন এবং ২০ শয্যার হাসপাতালের দাবী করেন।
তিনি আরও বলেন, সাতক্ষীরায় চিংড়িসহ সাদা মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে। এখন থেকে প্রচুর মাছ বিদেশে রপ্তানি হয়ে। সাতক্ষীরায় উৎপাদিত মাছ ভোমরা বন্দর দিয়ে রপ্তানি করতে পারছি না। সেটা বেনাপোল বন্দরে নিয়ে আসতে হচ্ছে। এই বৈষম্য দুর ভোমরা বন্দর দিয়ে রপ্তানি করা দাবী করেন তিনি। সাতক্ষীরার ৭ উপজেলা ও খুলনার পাইকগাছা এবং কয়রা উপজেলায় মাছ যশোরে আনতে হয়। বেনাপোল বন্দরে অনেক ভিড় হওয়ার কারণে অনেক সময় এই মাছগুলো নষ্ট হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, সাতক্ষীরা সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলটি দেশের অন্যতম বৃহৎ মিল ছিলো। সেই মিলটি আজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর মিলটি বন্ধ হয়ে যায়। এখানে ৫ হাজার শ্রমিক কাজ করতো। ১ বিঘার উপর অবস্থিত মিলে পুকুর, হাইস্কুল ও আবাশন ব্যবস্থা রয়েছে। বস্ত্র কলটি চালুর দাবী করেন।
তিনি আরও বলেন, দেশের ক্রীড়া অঙ্গনে সাতক্ষীরা অনেক সুনাম কুড়িয়েছে। সৌম্য, মোস্তাফিজ ও মৃত্যুঞ্জয় জাতীয় ক্রিকেটে দলে খেলছে। জাতীয় ফুটবল দলে অধিনায়ক সাবিনা, মাসুরাসহ অনেকে খেলছে। খোখো টিমের অধিনায়ক সাতক্ষীরার ছেলে। দ্রুততম মানবীও সাতক্ষীরা মেয়ে। শ্যুটিং চ্যাম্পিয়ন হয় সাতক্ষীরার ছেলে।
তিনি আরও বলেন, খেলাধুলায় বিশে^র সামনে দেশকে পরিচিত করে দিচ্ছি। সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি থেকে রাজস্ব এনে দিচ্ছি। সেখানে থেকে ২৫ শতাংশ জেলার পিছনে ব্যায় করলে সোনায় সোহাগা হয়ে যাবো।
প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি আরও বলেন, জেলা স্টেডিয়ামের অনুমোদন দিয়েছেন তা দ্রুত কার্যকর হয় দিকে নজর দিবেন। বর্তমান যে স্টেডিয়াম আছে তার দুটি গ্যালারি খুবই ঝূকিপূর্ণ। ইতোমধ্যে একটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। তিনটি গ্যালারি নির্মাণ করা খুবই জরুরী।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় পার্টি সংসদীয় গণতন্ত্রে বিশ^াসী। প্রতিটি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছি। আমরা নির্বাচন মুখী দল। আমাদের নেতা হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ সাহেব উপজেলা এবং জেলা চেয়ারম্যাদের যে ক্ষমতায় করে গিয়েছিলেন। সেই ক্ষমতায়ন পুন:রায় চালু করলে বাংলাদেশের মানুষ জনগনের শাসন পাবে। তা নাহলে আমলা তান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা থেকে যাবে। ক্ষমতা জনগনের হাতে দেওয়ার দাবী করেন তিনি।
Leave a Reply