November 21, 2024, 8:42 am
সাতক্ষীরাঃ পানির স্তর নেমে যাওয়াতে সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণাঞ্চলে অগভীর নকুপগুলোতে পানির সংকট দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি খাবার ও গৃহস্থালির কাজ, সেচ, কৃষি ও শিল্প-কলকারখানায় বেড়েছে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার। এমন পরিস্থিতিতে ভূগর্ভস্থ পানির স্বাভাবিক স্তর নিচে নেমে গেছে দুই থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত। জেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে জেলার ২৫ লাখ জনগোষ্ঠীর ৮৫ শতাংশ মানুষের খাবার পানি সরবরাহ করার সক্ষমতা তাদের রয়েছে। কিন্তু পানির স্তর নেমে যাওয়ায় মানুষ খাবার পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকারিভাবে জেলায় ১১৫টি পিএসএফ বসানো রয়েছে। ভূ-উপরিস্থ পানি নিয়ে তা শোধনের মাধ্যমে পরিবারগুলোতে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। অথচ ভূ উপরিস্থ এসব পানিও এখন অনেক কমে গেছে। ফলে কোনো কোনো জায়গায় পিএসএফ যথাযথভাবে কাজ করতে পারছে না। বেসরকারি পর্যায়ে সাতক্ষীরার কয়েকটি এনজিও বিভিন্ন স্থানে এসব পিএসএফ বসিয়েছে। সেখানেও দেখা দিয়েছে একই সংকট।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ আরও জানিয়েছে, বৃষ্টি কমে যাওয়ায় পানিতে লবণাক্ততাও মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সবশেষ জরিপ অনুযায়ী পানিতে সর্বোচ্চ ২৬০০ এমজি পার লিটার লবণাক্ততা পাওয়া গেছে। যেখানে উপকূলীয় এলাকায় গ্রহনযোগ্যতা ১০০০ এমজি পার লিটার। তবে দেশের অন্যান্য এলাকায় এই পানির গ্রহণযোগ্যতা সর্বোচ্চ ৬০০ এমজি পার লিটার। পানিতে অতিমাত্রায় লবণাক্ততার কারণে উপকূলের লোকজন মিষ্টি পানির খোঁজে অনেকদূর ছুটছে। কিন্তু কোথাও পানি পাচ্ছে না। এছাড়া শ্যামনগর, আশাশুনি এবং কয়রা এলাকাজুড়ে গ্রামবাসী বৃষ্টির পানি ধরে রেখে সারাবছর তা পান করে থাকেন। এবার সেসব পানিতে এরই মধ্যে গ্যাস এবং পোকা দেখা দিয়েছে। ফলে সে পানিও তারা খেতে পারছে না।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এখনো সারা দেশের গৃহস্থালি ও খাবার পানির ৯৪ শতাংশ চাহিদা পূরণ হচ্ছে ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে। এ উৎস থেকে গ্রাম এলাকায় ৯৯ শতাংশ ও ৮০ শতাংশ শহর এলাকায় পানি সরবরাহ করা হয়। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে চলতি মৌসুমে দেশের ১৮ শতাংশ নলকূপের পানি উত্তোলনে সমস্যা হয়েছে।
এ ছাড়া উপকূলীয় এলাকার গভীর ও অগভীর ভূ-স্তরের মাত্রাতিরিক্ত আয়রন ও আর্সেনিকের উপস্থিতি এবং উপযুক্ত ভূ-গর্ভস্থ পানির আধারের দুষ্প্রাপ্যতার কারণে নিরাপদ পানিপ্রাপ্তি বিঘিœত করে। উপকূলীয় এলাকায় পলিমাটির আধিক্য ও গভীর নলকূপ স্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। এ অঞ্চলগুলোতে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের ওপর জোর দেয়া হয়। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে শুষ্ক মৌসুমে খরা, অনাবৃষ্টি ও বিলম্বিত বৃষ্টিপাতের কারণে পুকুর ও খাল শুকিয়ে যাওয়ায় চলতি বছরে উপকূলীয় এলাকার বেশির ভাগ জায়গাতে মানুষ সুপেয় পানির চরম কষ্টে পড়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবে সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি,কালিগঞ্জও তালা,খুলনার দাকোপ, কয়রা, বাগেরহাটের মোংলা, শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ এলাকায় পানযোগ্য পানি খুবই দুষ্পাপ্য। এসব এলাকার বেশির ভাগ উপজেলায় গভীর নলকূপ কার্যকর নয়। এখানে বসবাসরত মানুষ বর্ষার মৌসুমের বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে ৩ থেকে ৪ মাস খাওয়া ও রান্নার কাজে ব্যবহার করে।
এসব এলাকার সীমিত সংখ্যক পুকুর, সিডর, আইলা ও আম্ফানের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ জলাশয় ও দীর্ঘস্থায়ী খরার কারণে এ বছর পানি সরবরাহ ব্যবস্থা জটিল আকার ধারণ করেছে।
সাতক্ষীরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের প্রধান শহিদুল ইসলাম জানান, জেলাতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর সাতশ’ ফুট পর্যন্ত নেমে গেছে। তবে স্থান বিশেষে তা পাঁচশ’ ফুট পর্যন্ত রয়েছে। ফলে জেলার ২৫ হাজার সরকারি টিউব অয়েলে পানি উঠছে না। এছাড়া পারিবারিকভাবে বসানো হাজার হাজার নলকূপেও পানি নেই। এমনকি সেচের পানি উত্তোলনও বাধার মুখে পড়ছে। এর পরও প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহে তারা কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে যাচ্ছে।
Leave a Reply