
সাতক্ষীরা সংবাদদাতা: শ্যামনগরে বস্তা বন্ধি এক ব্যক্তিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। হাত-পা বেঁধে মৃত্যু ভেবে বস্তায় রেখে গেছে সন্ত্রাসীরা। মামলা তুলে না নেওয়ায় গণধর্ষিতার ভাইকে রাস্তা থেকে অপহরণের পর নির্যাতন চালিয়ে মুমূর্ষ অবস্থায় বস্তাবন্দি করে ফেলে রাখার অভিযোগ উঠে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে শ্যামনগরের সোয়ালিয়া ব্রীজ নামক স্থান থেকে ওই যুবককে উদ্ধার করে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। পরে তাকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভতির্ করা হয়।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই যুবকের(২৪) বোন জানান, চলতি বছরের প্রথম সপ্তাহের পর দীর্ঘ ১০ মাস সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক না থাকায় তার দায়েরকৃত মামলা(নাঃশিশু-৪৯/১৮) তুলে নেওয়ার জন্য আসামী ও তাদের স্বজনরা তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল। সবশেষে প্রধান আসামী আবু বক্কর ছিদ্দিকের মেয়েকে দিয়ে ২০১৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ভাইয়ের বিরুদ্ধে দেওয়ায় পরিকল্পিত ধর্ষণের মামলা (নাঃ শিশু-৬৬/১৯) গত বছরের ২১ জুলাই খারিজ হয়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ ছিল তার মামলার আসামীরা।
এরই জের ধরে মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে বাড়ি থেকে অসুস্থ মায়ের জন্য ঔষধ নিতে শ্যামনগর উপশহরে যাওয়ার সময় তাকে অপহরণ করা হয়। মোবাইল ফোনে খবর পেয়ে মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে দিকে সোয়ালিয়া ব্রীজের পাশ থেকে দু’ হাত ও দু’ পা বাঁধা বস্তায় ভরা মুমূর্ষ ওই যুবককে উদ্ধার করে প্রথমে বেসরকারি হাসপাতাল ফ্রেন্ডশিপ ও পরে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তার দায়েরকৃত মামলায় নিশ্চিত শাস্তি জানতে পেরে পরিকল্পিতভাবে তার ভাইকে আসামী ও তাদের স্বজনরা পরিকল্পিতভাবে অপহরণের পর হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের পর বস্তাবন্দি করে হত্যার জন্য ফেলে রেখে গেছে বলে অভিযোগ করেন ওই নারী।
শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ জুবায়ের জানান, ওই যুবকের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ভারী জিনিস দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। তাছাড়া শরীরে বিষাক্ত কোন তরল পুশ করা হয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে তাকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
তবে শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হুদা জানান, তিনি বিষয়টি জেনেছেন। পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমেছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি শ্যামনগর উপজেলার যাদবপুর গ্রামের খোকন মন্ডলের ছেলে সুকুমার মন্ডল ও দেবীপুর গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে মাদ্রাসা শিক্ষক গোলাম রসুল একই এলাকার এক নারীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ফুলবাড়ি গ্রামের আব্দুল মোমিনের ছেলে আবু বক্কর ছিদ্দিকের ঘেরের বাসায় নিয়ে যায়।
ওই দিন বহু প্রতিশ্রুতি দিয়ে হুজুর ডেকে ছিদ্দিকের সঙ্গে ওই নারীর কাল্পনিক বিয়ে পড়ানো হয়। স্বামী স্ত্রী হিসেবে সময় পার করার একপর্যায়ে ওই নারী দু’মাসের অন্তঃস্বত্বা হয়ে পড়লে ওই বছরের ১১ জুন সকালে তাকে বাড়ি থেকে নিয়ে খুলনায় একটি বাড়িতে আটক রাখা হয়। সেখানে পাঁচদিন যাবৎ ছিদ্দিক, সুকুমার ও গোলাম রসুল পালাক্রমে ধর্ষণ করে ওই নারীকে। ১৬ জুন রাইসা ক্লিনিকে ওই নারীর গর্ভপাত ঘটানো হয়। পরে তাকে বিভিন্ন স্থানে রেখে ২৫ জুন ছিদ্দিকের বোন রোজিনার মাধ্যমে বাড়ির পাশে নিয়ে ফেলে রেখে যাওয়া হয়।
থানা মামলা না নেওয়ায় ওই বছরের ২৬ জুলাই ওই নারী বাদি হয়ে সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ওই তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলা তুলে নেওয়ার হুমকির ঘটনায় ওই বছরের ৮ আগষ্ট ধর্ষিতা নারী আদালতে ১০৭ ধারায় তিন আসামীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ২০১৭ সালের ২৮ আগষ্ট ও ২৫ অক্টোবর সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করেন। আদালতের নির্দেশে থানা মামলা নিলেও আসামীদের দারা প্রভাবিত হয়ে তদন্তকারি কর্মকর্তা শ্যামনগর থানার উপ-পরিদর্শক লিটন মিঞা ২০১৮ সালের ৬ ডিসেম্বর আদালতে সকল আসামীদের পক্ষে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
পুলিশের সোর্স বাধাঘাটার রেজাউলকে (বন্দুকযুদ্ধে নিহত) দিয়ে ধর্ষিতার ভাইয়ের বিরুদ্ধে একটি অপহরণ ও একটি মানবপাচারের মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। যা’ পরবর্তীতে খারিজ হয়ে যায়।
পুলিশের চুড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ওই নারী ২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে না-রাজির আবেদন জানালে বিচারক তা আমলে নিয়ে করে তিন আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে আসামীদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২০০০ সালের সংশোধিত ২০০৩ এর ৯(৩)/৩০ ধারায় অভিযোগ গঠণ করা হয়।
যুক্তিতর্ক শেষে ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর রায় এর দিন ধার্য করেন। ওই দিন রায় না হওয়ায় পরদিন ধর্ষিতার বাড়ির জানালা ভেঙে লুটপাট করা হয়। আসামী আবু বক্কর ছিদ্দিকের মেয়েকে দিয়ে ধর্ষিতার ভাইয়ের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ধর্ষণ মামলাটি গত বছরের ২৮ নভেম্বর খারিজ হয়ে যায়। চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি ধর্ষিতার ভাইকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ০১৯২৪-৫৭৮২৬৪ নং মোবাইল ফোন এবং ১০ থেকে ১১ জানুয়ারি ০১৭৬৬-৩৪২২৬৮ নং মোবাইল থেকে কয়েকবার হুমকি দেওয়া হয়। গত ১৪ নভেম্বর গণধর্ষণের মামলার রায় এর জন্য দিন ধার্য ছিল। বিচারক বদলী হওয়ায় দিন পরিবর্তণ হয়।