
নরসিংদীতে চাঁদাবাজির অভিযোগে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ও উপ-পরিদর্শক (এসআই)সহ তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। রবিবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে নরসিংদী আদালতের মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. রকিবুল ইসলামের আদালতে মামলাটি করেন শহরের বানিয়াছল এলাকার ফার্নিচার ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির মুন্সি। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী ১৮ অক্টোবরের মধ্যে র্যাব-১১ কে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে আদেশ দিয়েছেন।
মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়, হুমায়ুন কবির মুন্সি ও তার ছেলে আতিক দীর্ঘদিন ধরে নরসিংদী শহরের বানিয়াছল বটতলা বাজারে কাঠের ফার্নিচারের ব্যবসা করে আসছেন। মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দোকান বন্ধ রাখার ঘোষণা বাজারের ব্যবসায়ীদের জানা ছিল না। গত ২১ জুন সোমবার সন্ধ্যার পর ফার্নিচারের দোকান খোলা রাখার অপরাধে হুমায়ুন কবিরের ছেলে আতিকসহ বিভিন্ন দোকান থেকে ৬ জনকে মারধর করতে করতে ধরে নিয়ে যায় সদর থানার এসআই মোস্তাক ও পুলিশের কথিত সোর্স সবুজ। পরে নরসিংদী সদর মডেল থানা থেকে ছেলে আতিককে ছাড়িয়ে আনতে ফার্নিচার ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবিরকে খবর দেয় সবুজ মিয়া। হুমায়ুন কবির থানায় গিয়ে জানতে পারেন যে, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তার ছেলে আতিক ছাড়া অন্যান্যদের ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।
এসময় ছেলেকে ছাড়ানোর জন্য অনুরোধ করলে তৎকালীন নরসিংদী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বর্তমানে মাধবদী থানায় কর্মরত সৈয়দুজ্জামান ও নরসিংদী মডেল থানার এসআই মোস্তাক ২ লাখ টাকা দাবি করেন এবং টাকা না দিলে ছেলেকে ক্রসফায়ারে ফেরে ফেলার হুমকি প্রদান করেন। এসময় নিরুপায় হয়ে ছেলেকে বাঁচানোর জন্য ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেন হুমায়ুন। পরে বাকি টাকা দিতে না পারায় আতিকের ওপর নির্যাতন চালানো হয় এবং পরের দিন একটি পুরাতন (পেনডিং) ডাকাতি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
মামলার বাদী হুমায়ুন কবির মুন্সি আরও জানান, আমার ও আমার ছেলের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে থানায় কোনও অভিযোগ পর্যন্ত নেই। অথচ ওসি সৈয়দুজ্জামান ও এসআই মোস্তাক বিনা অপরাধে ধরে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে। দাবিকৃত চাঁদার পুরো টাকা দিতে না পারায় ডাকাতির মামলায় কোর্টে চালান করে দিয়েছে। আমার নিরপরাধ ছেলেটার জীবন নষ্ট করে দিয়েছে তারা। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
মামলার বিষয়টি শুনেছেন জানিয়ে ওসি সৈয়দুজ্জামান বলেন, ‘আমি বাদী হুমায়ুন কবির মুন্সিকে চিনি না। শুনেছি একজন আসামিকে নাকি ডাকাতির মামলায় অন্তর্ভুক্ত করায় এই মামলা হয়েছে। আমার ধারণা, তিনি আমাকে দেখলে চিনবেনও না।’ এছাড়া তিনি আরও বলেন, ‘টাকা লেনদেনের বিষয়টি একেবারেই সঠিক নয়। কেন তিনি এমন একটি মামলা করতে গেলেন, সেটাই বুঝতে পারছি না।’
বাদী পক্ষের আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান জানান, নরসিংদীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত মামলাটি আমলে নিয়েছেন। পরে ওই আদালতের বিচারক মো. রকিবুল ইসলাম র্যাব-১১ কে এই বিষয়ে তদন্ত করে আগামী ১৮ অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।